সিলেট: সিলেটে বহুল আলোচিত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী রায়হান আহমদ হত্যাকান্ডের চার্জশীট প্রায় চুড়ান্ত পর্যায়ে। শুধুমাত্র ফরেনসিক রিপোর্ট পেলেই তা প্রস্তুত করে আদালতে দিবে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রিমান্ডে থাকাকালে আসামিদের দেওয়া তথ্য, ভিসেরা প্রতিবেদন, পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে আসা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের বিশেষজ্ঞ একটি দলের সঙ্গে পরামর্শ করে রিপোর্ট তৈরি করেছে পিবিআই। তবে বিশেষজ্ঞ ওই দলের কাছে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার আলামত, ডিভাইস, উদ্ধারকৃত সিম ও মোবাইল সেট পর্যবেক্ষণে রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ডিভাইস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই আদালতে রায়হান হত্যার অভিযোগপত্র দাখিল করবে পিবিআই।
তবে এসআই আকবরকে সহায়তাকারী মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি মহানগর পুলিশ। ধরা পড়ার পর আকবর তাকে পালাতে সহায়তাকারীর বিষয়ে মুখ খুললেও পুলিশ এখনও তদন্ত করেই যাচ্ছে। এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির নির্দেশে রায়হান হত্যার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ কোতোয়ালি থানার আরও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র, এসআই আবদুল বাতেন ভূঁইয়া এবং এএসআই কুতুব আলীর বিরুদ্ধে। পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দায়িত্বে অবহেলায় আরও ৫ জন কর্মকর্তাকে শাস্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এর একটি সূত্র জানিয়েছে, রায়হান হত্যার অভিযোগপত্রটি আগামী বছরের প্রথম দিকে আদালতে দাখিল করার কথা রয়েছে পিবিআইর। রায়হান হত্যা মামলার মূল হোতা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এএসআই আশেক এলাহির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পিবিআই। এগুলো যাচাই-বাছাই করার পর বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করার পর প্রস্তুত রাখা হয় অভিযোগপত্রের কিছু অংশ। ওই দুজনকে রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্তি করা হবে।
পিবিআইর পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান বলেন, রায়হান হত্যা মামলা আমাদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জের। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে পিবিআই চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত নিয়ে পিবিআই তদন্ত দল একাধিকবার পুলিশের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনাও করেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পিবিআই কাজ করে সুফলও পেয়েছে। পুলিশের এই বিশেষজ্ঞ দলের কাছে সিসি ক্যামেরার ডিভাইসসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই পিবিআই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করবে।
তবে কবে নাগাদ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে এমন বিষয়ে জানতে চ্এাল তিনি বলেন, পিবিআই তদন্ত দল সব কাজ এগিয়ে রেখেছে। ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই পিবিআই হয়তো আরও ২/১দিন সময় নেবে। এরপর দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিল করবে আদালতে।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর আখালিয়া বাসিন্দা রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে পুলিশ প্রচণ্ড নির্যাতন করে। ১১ অক্টোবর সকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতেই রায়হানের স্ত্রী তামান্না আক্তার হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন।
আদালত মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেন। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১৫ অক্টোবর রায়হানের লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। একইদিন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ রায়হানের প্রথম ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়। এতে রায়হানের শরীরে ১১৩টি আঘাতের চিহ্ন এবং অতিরিক্ত আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেই নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ভিসেরা প্রতিবেদন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছালে তা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।